বৈদিক যুগ থেকেই সনাতন ধর্মে নারী অগ্রগণ্য। তাকেই সব রকম শক্তির উৎস হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু তারপর নারী শিক্ষা নারী প্রগতি এই কথাটা একটা সময় প্রায় শোনা যেত না বললেই চলে। মেয়েদের রাখা হতো গৃহবন্দী। তবে বর্তমানে শিক্ষা মানবজগতের এক অংশ হয়ে ওঠে। আর নারীরাও ফিরে আসেন স্বমহিমায়। তেমনই এক উচ্চ শিক্ষিত নারীর সংগ্রামের কথা আজ বলবো আপনাদের।
তাদের মধ্যে এমনই একজন নারী হলেন লেখিকার সুধা মূর্তি। তবে তার সম্পর্কে তিনি যে শুধু লেখিকা এই কথাটা ভুল হবে। লেখিকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন উদ্যোক্তা এবং পরোপকারী ও জনহিতৈষী কাজে ব্রতী মানুষ। আবার তার সাথে ভারতের অন্যতম বড় টেক জায়ান্ট ইনফোসিস ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপার্সন। তিনি ও তার ফাউন্ডেশন কাজ করে একটি মাত্র লক্ষ্যে। দেশের যে সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা শিক্ষাদান ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের সে শিক্ষাদান অন্যান্য সুবিধা প্রদানে কাজ করে থাকে।
এই মানুষটি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ১৯শে আগস্ট। কর্ণাটকের শিগগাঁওয়ে। তার জন্ম হয় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা ছিলেন পেশায় এক বিখ্যাত সার্জেন। এই সুবাদে ছোট থেকেই বেশ শিক্ষিত পরিবেশেই বেড়ে উঠেছেন সুধা। যার ফলে শিশু মন থেকেই তার মনে কাজ করত বড় হওয়ার স্বপ্ন। এই শিক্ষিত পরিবেশ আর নিজের স্বপ্নের তাগিদে আজ তাকে করে তুলেছে এক লেখিকা। বিদ্যা শিক্ষায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে B.E. শেষ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার কারনে ভর্ত্তি হন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে। সেখানে তিনি তার কম্পিউটার সায়েন্সে নিজের এমই সম্পূর্ণ করেন।
মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি তার প্রথম বই প্রকাশের জন্য যান আমেরিকায়। সেই বইটি তিনি উৎসর্গ করেন তার স্বামী এবং বন্ধু নারায়ন মূর্তিকে। এখন তার অনেক লেখা বই যা ছিল ইংরেজি ভাষায় তা দেশের নানা প্রান্তের নানা ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে।
ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে স্নাতক উত্তর ডিগ্রী পাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইনফোসিস ফাউন্ডেশন। বর্তমানে তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশন এর মত এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান চেয়ারপারসেন এবং ট্রাস্টি। তিনি ও তার এই ফাউন্ডেশন বন্যা দুর্ঘটনায় আহত মানুষের ২৩০০ এরও বেশি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশন পাবলিক স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি দারিদ্রতা দূরীকরণে কাজ করে। তাই এ কথা বলাই বাহুল্য যে সুদামূর্তি এমন এক বিশিষ্ট নারী চরিত্র যা অনুপ্রাণিত করছে নারী সমাজকে।